Corbett Trip 2021

Part 1



সকালে ঠিক ১১.১০ এ আব্দুল এর ফোন পেয়েই ব্লাডপ্রেশার বেড়ে গেল - স্যারজী র্সার্ভার কা প্রবলেমসে ধিকালা ফরেষ্ট বাংলো মে বুকিং নেহী মিলা' 15th কো ডরমিটারী মিলা বাকী দোদিন রুম নেহী মিলা ... ক্যায়া করু স্যার????
করবেট ভ্রমণ এর পরিকল্পনার একটা অন্যতম অঙ্গ হল ধিকালা বনবাংলোর বুকিং বা ধিকালায় রাত্রিবাস। যদি ব্যাক্তিগতভাবে আমি ধিকালায় রাত্রিবাস এর ফ্যান না হলেও ধিকালা জোনের অসাধারণ ল্যান্ডস্কেপ, জীববৈচিত্র্য , এবং রামগঙ্গা নদী সহ বিস্তীর্ণ তরাই গ্রাসলান্ড এর মোহময়ী রুপ সমস্ত করবেটপ্রেমীদের অমোঘ আকর্ষণের ভরকেন্দ্র।তাই ধিকালা সবসময় করবেটপ্রেমীদের কাছে
হট্-ফেভারিট ।
লকডাউন পরবর্তী পর্বে করবেট জঙ্গল ওপেন হবার পর থেকেই ধিকালাতে নিয়মিত সাইটিং এর জন্য ধিকালা ও কিছুটা হলেও ঝিরণা জোন ছিল প্রাইম ডিমান্ড। আব্দুল এর কথা শুনবার পর একবার ভাবলাম ট্রিপ ক্যানসেল করে দেই, আবার পরক্ষণেই ভাবলাম শুধু ধিকালা বনবাংলোর বুকিং পেলাম না বলে ট্রিপ ক্যানসেল করে দেবো? আর এই ট্রিপ এর অন্য সাথীরা অলরেডী বিমান এর টিকিট বুক করে ফেলেছে। করবেট এর বনদপ্তরে ফোন করে বিষয়টা বলতে ওনারা কোনো আশার আলো দেখাতে পারলেন না , কিন্তু বহুবার করবেট যাবার সুবাদে এবং উত্তরাখন্ড বনদপ্তরে চেনাশোনার সুবাদে এটুকু আশ্বস্ত হলাম যে ধিকালায় পৌঁছে গেলে ঠিক ব্যাবস্হা হয়ে যাবে।
তবু মনে খটকা লেগে থাকলো। আশ্বাস এর ওপর ভরসা করে পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা মুশকিল। সাধারণত অফিসে থাকলে সকাল ১১.৩০-১২টা অবধি আমি টিম মিটিং নিয়ে ব্যাস্ত থাকি। একটু অন্যমনস্ক আর চিন্তাগ্রস্ত দেখে পার্টনার অরিজিত জিজ্ঞেস করলো। ওকে বললাম সবটা। ও শুনে বললো - 'বাঘ দেখবার আশায় তো আর আপনি জঙ্গল ট্যুর করেন না, তাই এটাও সমাধান হয়ে যাবে। আর ও বেশী টেনশন পড়লাম যখন দেখলাম এইবার টীম চারজন একদম নতুন যারা ফেসবুক এর দৌলতে আমার সাথে পরিচিত হলেও আমার সাথে আগে কখনো জঙ্গল ভ্রমণ করেন নি।
এ প্রসঙ্গে অনেকেই বলবেন যে বাইরের কোনো রির্সট বা হোটেলে থেকে করবেট ঘোরা যায়। হ্যাঁ, তা যায় কিন্তু করবেট ভ্রমণ এর পরিকল্পনা করতে গেলে খুব ভালোভাবে জানতে হবে করবেট জঙ্গলের বিভিন্ন জোন এবং বাইরের রির্সট বা হোটেলে থাকবার থেকে বিভিন্ন জোনের আন্ডারে থাকা বনবাংলো গুলোতে থাকবার ব্যাবস্হা ও সাফারির কি সুবিধা ও অসুবিধা। এগুলো নিয়ে আমি বিস্তারিত আলোচনা করবো পরবর্তী পর্ব গুলোতে।
করবেট এর জঙ্গল মূলত পাঁচটি জোনে বিভক্ত - এবং এই সবকটি জোনে বা ওই জোনের অধীনে বিভিন্ন বনবাংলোতে রাত্রিবাস করা যায়। জোনগুলি হলো -
1) ধিকালা , 2) বিজরাণী , 3) ঢেলা 4) ঝিরণা, 5)সোনানদী, 6) পকহারো। - শেষ দুটি অর্থাৎ 5 & 6 পড়ে গাড়োয়ালে বাকি সব কটা জোন এবং তৎসহ সীতাবনী বাফার জোন পরে কুমায়নে।
তবে করবেট এ যতগুলো বনবাংলো আছে তার মধ্যে সবচেয়ে চাহিদা বেশী ধিকালা বনবাংলোর এবং তারপর ধিকালার জোনের অধীনে অনান্য বনবাংলো যথা -1) সুলতান 2) গৈরাল 3) সরাপদুলি এবং ভিভিআইপিদের জন্য সংরক্ষিত - খিন্নাউল্লি বনবাংলো।
**********
বনবাংলোতে না জায়গা পেলে আপনি ডে-ভিজিট এ সাফারি পারমিট বুক করে করবেট জঙ্গল ভ্রমণ করতে পারেন কিন্তু মনে রাখবেন ধিকালা বনবাংলো বা ধিকালা জোন এর অধীনে থাকা বনবাংলোতে আপনার রাত্রিবাসের অনুমতি না থাকলে আপনি ধিকালা জোনে জিপসী করে সাফারি করতে পারবেন না। সেই ক্ষেত্রে আপনাকে ডে ভিজিট এর পারমিট বুক করতে হবে এবং ধিকালার মূল প্রবেশদ্বার "ধানগিরি গেট" এসে বনদপ্তরের নির্ধারিত ছোটো বাসে করে সাফারি করতে পারবেন। ধানগিরি গেট থেকে ধিকালা বনবাংলোর দূরত্ব ৩১ কিমি। এই ৩১ কিমি পুরোটাই করবেট এর জঙ্গলের কোর এরিয়ার মধ্য দিয়ে এবং টাইগার থেকে শুরু করে সমস্ত বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণভূমি।
ধিকালা বাদ দিয়ে অনান্য জোনগুলোতে আপনি বনবাংলোতে রাত্রিবাসের অনুমতি না থাকলেও বাইরের কোনো হোটেল বা হোমস্টে তে থেকে জিপসি করে সাফারি করতে পারবেন সেক্ষেত্রে আপনাকে আলাদা করে ডে-ভিজিট এর পারমিট করতে হবে।
********
ডে ভিজিট এর জোনগুলি তে জঙ্গল সাফারি করা যায় - 1) বিজরাণী 2) ধিকালা 3) ঢেলা 4)দুর্গাদেবী 5)গর্জিয়া এবং 6)পকরোহ ও 7) সোনানদী ।।এরমধ্য সোনানদী এবং পকরোহ এদের এন্ট্রি বা প্রবেশ হয় - কোটদ্বার দিয়ে যা গাড়োয়াল এর অর্ন্তগত এবং হরিদ্বার হয়ে ল্যান্সডাউন ভ্রমণের মাঝে ঘুরে নেওয়া যায়। বাকী পাঁচটি জোন ঘুরবার জন্য কাছের স্টেশন বা জনপদ হল রামনগর যা কুমায়নের এর অর্ন্তগত ।
প্রাথমিক ভাবে আব্দুল এর ওপর রেগে গেলেও অফিসে বসে চায়ে চুমুক দিতে দিতে ফাইনাল পরিকল্পনা ছকে ফেললাম...ফাইনাল পরিকল্পনা শুনে আব্দুল একটু দমে গেল কারণ ফাইনাল প্ল্যান এ যে জোনগুলো রাখলাম তাতে একমাত্র ঝিরণা ছাড়া বাকী জোনগুলোতে সাইটিং এর চান্স নেই বললেই চলে।
সব শুনে আব্দুল বললো -
স্যার আপনে বহুত রিস্ক লে লিয়া। ........
*****
করবেট সর্ম্পকিত যাবতীয় তথ্যের জন্য - 89722 47306 অথবা www.northeasttravels.in

সাথে দিলাম দুই বছর আগেকার একটা করবেট ভ্রমণের ইউটিউব লিংক - https://www.youtube.com/watch?v=-JptHFVNe8M 



Part 2


অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে জঙ্গল ভ্রমণের আবার রিস্ক কি? অনেকে হয়ত ভাববেন যে - বন্যপ্রাণীরা আবার জিপসী এর ওপর আক্রমণ করবে না তো ? এই প্রশ্নটা আমায় অনেকেই করেন - আমি উত্তরে বলি যে একজন বন্যপ্রাণপ্রেমী হিসাবে এবং শেষ 15 বছরে ভারতের প্রায় বিভিন্ন জঙ্গলে 500 এর (জাতীয় উদ্যান ও অভয়ারণ্য সব মিলিয়ে) 500 এর কাছাকাছি ওপর সাফারির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে এটুকু বলতে পারি আমার বা আমার জঙ্গলপ্রেমী বন্ধু বা ট্যুরিস্টদের ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞতা হয়নি দু একটা ব্যাতিক্রম ছাড়া । একবার 2006 কি 2007 - লের্পাড গাড়ীর বনেটে বসে থাকা আর দু-একবার হাতির দঙ্গলের রাস্তা আটকে দেওয়া। একবার মহারাষ্ট্রের বোর জঙ্গলে বিখ্যাত বাঘ বাজীরাও এর দূর থেকে জিপসী দেখে চার্জের মুডে এগিয়ে আসা, তবে আজ পযর্ন্ত ভারতবর্ষের কোনো জঙ্গলেই টূরিস্টদের ওপর কখনো বন্যপ্রাণীর থেকে আক্রমণের ঘটনা ঘটেনি।
অনেকেই বলবেন ইউ-টিউব এ ভিডিও দেখেছি বাঘ জিপসি দেখে তেড়ে আসছে এগুলো কি মিথ্যা ? না মিথ্যা নয় আবার পুরো সত্যি নয়। বন্যপ্রাণীরা যতক্ষণ না আপনার বা আপনার কোনো অ্যাক্টিভিটি থেকে বিপদের আঁচ পাচ্ছে ততক্ষণ ওদের তরফ থেকে আক্রমনাত্বক হওয়া প্রায় অসম্ভব । করবেটে আমি সাফারি রেখেছিলাম - ঢেলা ।।ধিকালা, বিজরাণী, ঝিরনা এই চারটি জোনে। এর মধ্যে ধিকালা ছাড়া বাকী সব জোনে টাইগার সাইটিং এর চান্স ছিল প্রায় শূন্য। একমাত্র ঝিরণাতে কিছুটা চান্স ছিল। পরবর্তী সময় এই রিস্ক -রিওয়ার্ড এ কিভাবে বদলে গিয়েছিল সেই অভিজ্ঞতা ধারাবাহিক ভাবে করবো।
যাইহোক মূল প্রসঙ্গে আসি - একটা জঙ্গল ভ্রমণের ঠিকঠাক পরিকল্পনা করতে গেলে অনেক বিষয় মাথায় রাখতে হয় - যথা -
1) - সময় অর্থাৎ কোন সময় জঙ্গল ভ্রমণের উপযুক্ত ?
উত্তর - বর্ষা বাদ দিয়ে যে কোনো সময় জঙ্গল ভ্রমণের আদর্শ। আবার কিছু জঙ্গল বা বায়ো-ডাইভার্সিটি হটস্পট আছে যার জন্য উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল যেমন - ওয়েস্টার্ণ ঘাট , আম্বোলি ,আগুম্বে রেন ফরেষ্ট ইত্যাদি। আবার অনেকে বলেন গরমকালে বাঘ বেশী দেখা যায় তাই গরমকালে টাইগার রির্জাভে যাওয়া উচিত। এই সব ধারণার কোনো ভিত্তি নেই , ঠিকঠাক পরিকল্পনা থাকলে শীত গ্রীষ্ম বর্ষা সব ঋতুতেই দেখা যায়।
2) জঙ্গলের প্রকৃতি- এখানে আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে আপনি কি ধরণের জঙ্গলে ঘুরতে চান - মনে করুন আপনি বাঘ দেখতে চান , আমি বাঘের প্রসঙ্গ তুললাম কারণ ভারতবর্ষের ওয়াইল্ডলাইফ ট্যুরিজমের 90% বাঘ বা বাঘ দেখা যায় এরকম জাতীয় উদ্যানকে ঘিরেই আর্বতিত হয়। তাহলে যে জঙ্গলগুলোতে বাঘ দেখা যায় যেমন - তাড়োবা , কানহা , রণথম্বর , করবেট ইত্যাদি ,আবার কাজিরাঙ্গাতে ও বাঘ দেখা যায়। তাহলে আমি কি বাঘ দেখবার জন্য কাজিরাঙ্গা যাবো না করবেট না তাড়োবা। যারা বন্যপ্রাণীদের ছবি তুলতে ভালোবাসেন তাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা কারণ তারা সব জেনেশুনেই মনস্থির করেন বা পরিকল্পনা করেন কিন্তু সাধারণ পর্যটক বা যারা নতুন তাদের পক্ষে এই ডিসিশন নেওয়া শক্ত। তবে শুধু যদি বাঘ দেখা প্রাইম উদ্দেশ্য হয় তাহলে যে জঙ্গলগুলোতে টাইগার এর সাইটিং এর চান্স বেশী যেমন তাড়োবা- কানহা - বান্ধবগড় এইরকম জঙ্গলে ভ্রমণ করা বা ঘুরতে যাওয়া ভালো। একটা জিনিস মাথায় ঢুকিয়ে নেওয়া ভালো যে ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফী ট্যুর আর নিছক জঙ্গলকে ভালোবাসে জঙ্গল ভ্রমণ দুটো আলাদা এবং দুটোর পরিকল্পনা সম্পূর্ণ আলাদা হওয়া উচিত।
3) সাফারি বুকিং - জঙ্গল ভ্রমণের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরত্বপূর্ণ অঙ্গ এবং মূল পরিকল্পনার সবচেয়ে নির্ণায়ক ফ্যাক্টর । আজকাল সোশালমিডিয়া এবং হোয়াটস্অ্যাপ্ গ্রুপ এর দৌলতে মোটামুটি কোন বাঘ কোথায় কখন কোন জোন এ দেখা গেছে সে পটি ঠিক করেছে কিনা বা জল খেয়েছে কিনা সব তথ্য মূর্হতে আমাদের কাছে চলে আসে। এবং ঐ জোনে বাঘ দেখা গেছে বলে এখুনি ঐই জোনে সাফারি বুক করে নিলাম, অনেক সময় এটা বেশ ক্লিক করে অনেক সময় করে না। বেশীরভাগ জঙ্গলে সাফারির পারমিট বুকিং তিন থেকে চারমাস আগে শুরু হয় (করবেট ব্যাতিক্রম - পরে সেব্যাপারে আলোচনা করব) এবং এই পারমিট বুকিং এর সময় এই আপনায় জোন পছন্দ করে নিতে হয় তাই এই ব্যাপারটাতে প্রচন্ড গুরত্ব দিতে হবে। যদিও বেশীরভাগ জঙ্গলে বাঘ একটি নির্দিষ্ট এরিয়া নিয়ে বসবাস করে এবং কিছু বাঘ একদমই ফটোজেনিক তাই তাদের দেখা পাওয়ার চান্সও বেশী এবং এক্ষেত্রে সাফল্যের হার মোটামুটি একশ শতাংশ। কিন্তু যেসব বাঘ এক জোন থেকে আরেকটা জোন মুভ করে - যেমন বান্ধবগড় এর ক্ষেত্রে মগধি এবং খিটাউলি এর মধ্য, তাদের দেখা হটাৎ পাওয়া কষ্টসাধ্য। এরকম অনেক উদাহরণ আছে, পরে কোনো পর্বে হয়তো এ বিষয়ে আলোচনা করবো।
4) জিপসি ড্রাইভার এবং গাইড - যে কোনো জঙ্গল ভ্রমণের ক্ষেত্রে অপরিহার্য অঙ্গ। ইনফ্যাক্ট এই একটা জায়গায় সবাইয়ের খুব নজর দেওয়া উচিত। গাইড ও জিপসী ড্রাইভারের ঠিকঠাক কম্বিনেশন বদলে দিতে পারে জঙ্গল চেনার এবং দেখার ধারণাকে। এই দুজনের প্রচেষ্টা এবং বোঝাপড়া একটা জিরো সম্ভাবনাকে বদলে দিতে পারে 100 শতাংশ সাফল্যে। এব্যাপারে আমার বহু অভিজ্ঞতা যেমন আছে ঠিক কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন গাইড ও জিপসী ড্রাইভারকে সঙ্গে নিয়ে ভুগতে হয়েছে। আবার নতুন গাইড বা জিপসী ড্রাইভার নিয়ে সাফারিতে গিয়ে পরস্পরের মত বিনিময়ে দুপক্ষই সমৃদ্ধ হয়েছি এমন উদাহরণও প্রচুর । যারা নিয়মিত জঙ্গলে যান বা জঙ্গলের ট্যুর অপারেট করেন তারা মোটামুটি ভালো জিপসী ড্রাইভারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা পরিবারের একটা অংশ হয়ে যান। আমার ব্যাক্তিগত মতামত সাফারির পারমিট বুক করবার সময় এই দুজনের মতামত নেওয়া ভালো। আপনার জঙ্গল ভ্রমণের রিস্ক- রিওয়ার্ড রেশিওর অনেকটাই এই দুটো ব্যাপারের ওপর নির্ভরশীল। একজন জিপসী ড্রাইভারের পর্যবেক্ষণ একটা শূন্য চান্সকে কিভাবে 100 শতাংশ সাফল্যে বদলে দিয়েছিল কোনো একটা পর্বে সেই আলোচনা করবো।
5) সঙ্গী নির্বাচন - সাধারণত ফটোগ্রাফী ট্যুর হলে কিছু সমমনস্ক বন্ধুবান্ধব মিলে গ্রুপ তৈরি হয়ে যায় এবং সেক্ষেত্রে সমস্যা থাকে না। আবার অনেক সময় পরিবারের সদস্যরা মিলে পরিকল্পনা করেন। যদি আপনি নিজের পরিবার নিয়ে যান এবং সেখানে যদি ছোটো বাচ্চা থাকে তাহলে জঙ্গল ভ্রমণের পরিকল্পনা করবার সময় ছোটদের কথা ও মাথায় রাখবেন। মনে করুন প্রচন্ড গরমে রণথম্বোর বা সেন্ট্রাল ইন্ডিয়ার কোনো জঙ্গলে আপনি পরিকল্পনা করলেন, সেখানে ঐ গরমে ঐ সাফারির ধকল আপনার ছোট বাচ্চা নিতে পারবে কিনা মাথায় রাখুন । বাচ্চা বা শিশু থাকলে কাজিরাঙ্গা , কানহা এইসব জঙ্গল দিয়ে শুরু করুন, ইনফ্যাক্ট ছোটদের জঙ্গল চেনাবার জন্য কাজিরাঙ্গার বিকল্প হয় না। মনে রাখবেন ছোটদের জঙ্গল বা প্রকৃতি পাঠ দেবার প্রাথমিক দায়িত্ব আপনার।

5) থাকবার জায়গা - এটা জঙ্গলের মূল এন্ট্রিগেট এর যত কাছাকাছি হবে তত ভালো । করবেট এর ক্ষেত্রে ফরেষ্ট বাংলোর কোনো বিকল্প নেই।




Part 3


আমরা প্রত্যেকেই জানি করবেট জাতীয় উদ্যান প্রখ্যাত শিকারী জিম করবেটের নাম অনুসারে। শুধু যে মানুষখেঁকো বাঘ বা লের্পাড করবেট শিকার করতেন তা নয় অনেক নিরীহ বাঘ ও উনি ট্রফি হান্টিং এর জন্য শিকার করেছিলেন । একথা অনস্বীকার্য যে করবেট একজন দক্ষ শিকারী ছিলেন কিন্তু করবেটসাহেবের শিকারী থেকে একজন দক্ষ সংরক্ষণবিদ্ হয়ে ওঠবার পেছনে যে মানুষটার সবচেয়ে বেশী অবদান তিনি হলেন ফ্রেডরিক ওয়াল্টার চ্যাম্পিয়ন নামে একজন ব্রিটিশ ফরেষ্ট অফিসারের। ফ্রেডরিকের ভাই স্যার জর্জ চ্যাম্পিয়ন এর অন্যতম অবদান হলো ভারতের জঙ্গল গুলোকে তাদের চরিত্র অনুযায়ী আলাদা করা। একসময় ব্রিটিশ পুলিশবাহিনীতে কাজ করার সুবাদে এবং তদানীন্তন ইউনাইটেড প্রভিন্সে ( ভারতবর্ষের এই অঞ্চল তখন এই নামে পরিচিত ছিল।) কাজ করবার অভিজ্ঞতার জন্য পুলিশবাহিনী থেকে অবসর নেবার পর ফ্রেডরিক ওয়াল্টার চ্যাম্পিয়ন তদানীন্তন ইমপিরিয়াল ফরেষ্ট সার্ভিস ( বর্তমানে যা ইন্ডিয়ান ফরেষ্ট সার্ভিস বা IFS) যোগদেন এবং ইউনাইটেড প্রভিন্স এর DFO বা ডিভিশনাল ফরেষ্ট অফিসার হিসাবে ভারতবর্ষে আসেন। আমার বন্ধুতালিকা থাকা পূর্ণিমাদির বাবা ইম্পিরিয়াল ফরেষ্ট সার্ভিসে ছিলেন এবং কিছুটা হলেও সেই সময়ের জঙ্গলের অনুভূতি বা অভিজ্ঞতা ওনার আছে । 1920 সালে এই ফ্রেডরিক স্যার এর হাত ধরেই ভারতবর্ষের বন্যপ্রাণীর জগতে যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটে যায়। ভারতের জঙ্গলে প্রথম ক্যামেরা বসিয়ে বা ক্যামেরা ট্র্যাপ এর মাধ্যমে বন্যপ্রাণীর ছবি তোলা এবং ডকুমেন্টশন করেন এই ফ্রেডরিক স্যার এবং করবেট এর জঙ্গলে ওনার তোলা বাঘের ছবি থেকেই প্রথম জানা যায় যে প্রত্যেকটা বাঘের স্ট্রাইপ আলাদা হয়। এই ক্যামেরা ট্র্যাপ এবং অনান্য কাজে ফ্রেডরিককে পুরো মাত্রায় সাহায্য করেন জিম করবেট এবং সেই থেকে করবেট সাহেব ও আস্তে আস্তে সংরক্ষণ এর দিকে আগ্রহী হন।
আজকের করবেট এর জঙ্গল জিম করবেট এর নামাঙ্কিত করবার আগে এই এলাকা ছিল মূলত গাড়োয়ালের তেহরী রাজাদের হাতে। যদিও ভারতের অনান্য রাজ্য ও রাজন্যবেরর্গ শিকারে উৎসাহ থাকলেও তেহরীর রাজাদের খুব একটা উৎসাহ ছিলো না। তেহরী রাজের অধীনে থাকা এইসব এলাকায় মূলত "বকসাস্" উপজাতিদের বাস ছিল এবং এই সব জমিতে বসবাস ছাড়াও তারা ফসল ফলানো ও পশুচারণ করে জীবনধারণ করতো। 1860 সালে যখন তেহরীর রাজারা ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া হাতে এই জায়গা হস্তান্তর করবার পর বকসাস্ উপজাতিদের এখান থেকে সরে যেতে হয় এবং ব্রিটিশরা এই এলাকা সংরক্ষণ করতে উদ্যোগী হয়। 1868 সালে তদানীন্তন ব্রিটিশ আধিকারিক মেজর রামসে এই পার্ক এর সীমানা নির্ধারণে উদ্যোগী হন। 1907 সালে অভয়ারণ্য ঘোষণা এবং পরবর্তী সময় করবেট সাহেব অনান্য ব্রিটিশ অফিসারদের সহযোগিতায় 1930 থেকে 1936 সাল পর্যন্ত এই পার্কের সীমানা পুর্ণবিন্যাস করা হয় এবং তদানীন্তন ইউনাইটেড প্রভিন্স এর গর্ভনর ম্যালকম হেইলির নামে নামকরণ হয় "হেইলি জাতীয় উদ্যান" যা ভারতের প্রথম জাতীয় উদ্যান।
আগেই বলেছি 1920 সালের ক্যামেরা ট্র্যাপিং থেকে 1936 সাল পার্কের সীমানা নির্ধারণ অবধি সমস্ত কাজে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িয়ে ছিলেন করবেট সাহেব। আজকের করবেট হয়ে উঠবার পেছনে স্যার ফ্রেডরিক চ্যাম্পিয়ন ( মূলত এনার উদ্যেগে তৈরি হয় করবেট ফাউন্ডেশন) এবং অনান্য ব্রিটিশ অফিসারদের অবদান অনস্বীকার্য। ব্যাক্তিগতভাবে আমার অভিমত ব্রিটিশ শাসনের হাতে ভারতবর্ষ আর কিছুদিন থেকে গেলে লাভ ছাড়া ক্ষতি কিছু হত না।
যদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের সময় নজরদারীর অভাবে নির্বিচারে গাছকাঠা ও বন্যপ্রাণী হত্যার কারণে এই জাতীয় উদ্যান কিছুটা গরিমা হারালেও 1950 বা 1951 সালে এর নতুন নামকরণ হয় রামগঙ্গা জাতীয় উদ্যান যদিও 1947 সালে করবেট তার অবসরকালীন জীবন কাটাবার জন্য কেনিয়া চলে যান। আজ জঙ্গলে বেড়াতে গেলে অনেকেরই জঙ্গলের মধ্যে বা জঙ্গলের বাইরে ইকো টূরিজম জোন এ অবস্হিত গাছের ওপর বাড়ী বা কটেজ এ থাকবার অভজ্ঞতা হয়েছে , আমাদের ডুর্য়াসে গোরুমারা জঙ্গলের গাছবাড়ীতে থাকবার অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে , এই গাছবাড়ী বা TREETOP এর জনক ও এই করবেট সাহেব। আফ্রিকার কেনিয়াতে বন্যপ্রাণীকে কাছ থেকে পর্যবেক্ষণের জন্য এই গাছবাড়ী করবেট সাহেব নির্মাণ করলেও এর জনপ্রিয়তা লাভ করে যখন ইংল্যান্ডের তদানীন্তন রাজকুমারী বর্তমান রাণী এলিজাবেথ 1952 সালে এই TREETOP রাত্রিবাস করেন । যদিও এলিজাবেথের বাবা কিং জর্জ VI এর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে রাণীকে ইংল্যান্ডে ফিরে আসতে হয় এবং আজ পর্যন্ত রাণীমা ইংল্যান্ডের রাণী হিসাবে ক্ষমতাসীন। মৃত্যুর আগে করবেট এর লেখা TREETOP বইয়ে এই ঘটনার উল্লেখ আছে এবং বর্তমানে NETFLIX এ ব্রিটিশ রাজপরিবারের ওপর তৈরি CROWN series এ আপনারা এই ঘটনার বিবরণ দেখতে পাবেন। 1955 সালে করবেট মারা যাবার পর করবেট ফাউন্ডেশনের সুপারিশ অনুযায়ী 1956 সালে এই রামগঙ্গা জাতীয় উদ্যান নাম পরিবর্তিত হয়ে পাকাপাকি ভাবে করবেট জাতীয় উদ্যান নামে পরিচিত হয়। 1973 সালে প্রজেক্ট টাইগার এর অন্তভুক্ত হবার পর 1974-1976 কালাধুঙ্গি ফরেষ্ট ও সোনানদী কে জুড়ে নিয়ে তৈরি হয় আজকের করবেট জাতীয় উদ্যান।





Comments