********* পাখি দেখতে সিগরী **********
দীপঙ্কর রায়
________________________________________
সদ্য দশেরা পেরিয়েছে নৈনিতালের । পুরো নৈনিতাল জুড়ে উৎসবের মেজাজ। প্রায় দেড় কি.মি লম্বা আর আট কি.মি চওড়া নৈনি লেককে ডানদিকে রেখে সর্পিল পাকদন্ডী পথ পেড়িয়ে চলেছি সিগরীর পথে। কিলবারি পেরিয়ে এসে রাস্তা নির্জন, মাঝে মাঝে দু'একটা বাইক হুস্ হাস করে পাশ কাটিয়ে গেল। একটা বাঁক পেরিয়ে ড্রাইভার গাড়িটা জোরে ব্রেক কষল। সামনে দাঁড়িয়ে পাহাড়ী ছাগল বা হিমালয়ান থর। ক্যামেরা রেডি করতে করতেই ছাগল বাবাজি অন্তরালে।
রোদ উঠতেই তুষারশৃঙ্গগুলো মেঘে ঢাকা। নৈনিতাল থেকে ২০ কি.মি দূরে সিগরী যাবার পুরো রাস্তাটাই জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। পাখিদের স্বর্গরাজ্য এই সিগরী। প্যাঙগট পেরিয়ে আরো ৮ কি.মি এগিয়ে রাস্তার ধারে ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে বললো এসে গেছি। গাড়ির হর্ন শুনে ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা চন্দন জি এগিয়ে এলেন। নৈনিতাল KMVN থেকে ওনাকে আগেই জানিয়ে রাখা হয়েছিল। মূল রাস্তার থেকে ক্যাম্প একটু নীচে। এই ক্যাম্প নির্বাচনের অন্যতম কারণ ক্যাম্পের তিন চার কি.মির মধ্যে বিরল প্রজাতির কোকলাস ফেজেন্ট ও চিয়ার ফেজেন্ট এর আবাসস্থল। এছাড়া হিমালয়ের হরেক প্রজাতির পাখির দেখা মেলে এখানে। জিনিসপত্র গাড়ি থেকে নামিয়ে কিচেন কাম ডাইনিং এ দাঁড়ালাম। এটাই এই
ক্যাম্পের সবচেয়ে উঁচু জায়গা যেখান থেকে মোবাইল সিগনাল পাওয়া যায়। মেজদার আধুনিক ঘড়িতে উচ্চতা দেখলাম প্রায় ৭০০০ ফুট। ডাইনিং থেকে সোজা সামনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই একে একে চোখে পড়লো পলকহীন তুষারশৃঙ্গ। থরে থরে ওক, পাইন, বার্চ ইত্যাদি গাছের সুউচ্চ সারি। আবার ক্যাম্প লাগোয়া আপেল, এপ্রিকট, ওয়ালনাট, চেরি গাছ ও রং বেরঙের পুষ্পের সমাহার। ডাইনিং থেকে সিঁড়ি দিয়ে দশ ধাপ নামবার পর থাকার টেন্টগুলো চোখে পড়লো। সুইসটেন্ট, জিপার টেনে ভিতরে ঢোকামাত্র দেখলাম টয়লেট থেকে শুরু করে আধুনিক সব ব্যবস্থাই মজুত।চাইলে গরমজল ও পাওয়া যাবে। চন্দন জি ও নারায়ণ জি দুজনে মিলে ক্যাম্প চালান।নারায়ণ জি রসনাতৃপ্তির দায়িত্বে।
ক্যাম্পের সবচেয়ে উঁচু জায়গা যেখান থেকে মোবাইল সিগনাল পাওয়া যায়। মেজদার আধুনিক ঘড়িতে উচ্চতা দেখলাম প্রায় ৭০০০ ফুট। ডাইনিং থেকে সোজা সামনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই একে একে চোখে পড়লো পলকহীন তুষারশৃঙ্গ। থরে থরে ওক, পাইন, বার্চ ইত্যাদি গাছের সুউচ্চ সারি। আবার ক্যাম্প লাগোয়া আপেল, এপ্রিকট, ওয়ালনাট, চেরি গাছ ও রং বেরঙের পুষ্পের সমাহার। ডাইনিং থেকে সিঁড়ি দিয়ে দশ ধাপ নামবার পর থাকার টেন্টগুলো চোখে পড়লো। সুইসটেন্ট, জিপার টেনে ভিতরে ঢোকামাত্র দেখলাম টয়লেট থেকে শুরু করে আধুনিক সব ব্যবস্থাই মজুত।চাইলে গরমজল ও পাওয়া যাবে। চন্দন জি ও নারায়ণ জি দুজনে মিলে ক্যাম্প চালান।নারায়ণ জি রসনাতৃপ্তির দায়িত্বে।
স্নান সেরে ডাইনিংয়ে এলাম। সাধারণ মেনু ডাল,ভাত,রুটি,ক্যাপসিকাম আলু দিয়ে সবজি। নারায়ণ জির হাতে সত্যি জাদু আছে, যে কোনো বড় হোটেলে শেফ হবার সমস্ত গুণাবলী আছে। খেতে খেতেই দেখলাম ডাইনিং থেকে দশ ফুট দূরে গাছের ডালে বসে আছে দুটি ইয়েলো ব্রেস্টেড গ্রীন ফিঞ্চ । আফশোষ সঙ্গে ক্যামেরা নেই। চন্দন জি এলেন।যতদিন ছিলাম দেখেছি প্রয়োজনের বেশি কথা বলেন না। অথচ স্মিতহাসি সম্বল করে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছেন। ওনার সঙ্গে বসে আগামী দেড় দিনের পুরো প্ল্যান করে ফেললাম। বললেন যে আপনারা একটু পরে বেরিয়ে এখান থেকে হেঁটে বিনায়ক পয়েন্ট পর্যন্ত চলে যান। কোকলাস ফেজেন্টরা বিকেল পাঁচটার পর রাস্তা পারাপার করে।
বিপিন'দা বলল রাত্রে মাটন খাবো। চন্দন জি বললেন কাল নৈনিতাল থেকে এনে খাওয়াবেন, আজ দেশী চিকেনের ঝোল। সাড়ে তিনটে বাজে, একটু রেস্ট নিয়ে ক্যামেরা হাতে বেরিয়ে পড়লাম। আগেই উল্লেখ করেছি সিগরীর এই পার্বত্যভূমি হিমালয়ের বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আবাসস্থল। যদিও ২০১৫ সালে পূজার সময় মুন্সিয়ারীতে বিটুলীঘাটের কাছে চিয়ার ফেজেন্ট এর দেখা পেয়েছিলাম, তাই এবার কোকলাস ফেজেন্ট, রুফুস বেলিড উডপেকার, গ্রে উডপেকার ছিল মূল লক্ষ্য।
রাস্তা দিয়ে হাঁটছি, আকাশ মেঘলা, বিনায়ক পয়েন্ট অতিক্রম করে আরো তিন কি.মি এগিয়ে এসেছি। একটা বড়ো হরিণ ছাড়া বিশেষ কোনো পাখি চোখে পড়েনি। রাস্তা বেশ নির্জন।এই সময় একটা গাছে এসে বসলো রুফুস বেলিড উডপেকার । ভারতবর্ষের বিশেষতঃ কুমায়ুন ও গারোয়ালের পার্বত্য অঞ্চলে এদের দেখা যায়। কিন্তু অন্ধকার ও আলো কম, ভালো ছবি নেওয়া গেল না। ধওলচিনাতে আনন্দময়ী গেস্টহাউসে থাকবার সময় দু'একবার দেখা পেলেও ছবি নেওয়ার পরিস্থিতি ছিল না। বেশ বিফল মনোরথে ক্যাম্পের দিকে ফেরার পথ ধরলাম। চন্দন জি মুখের ভাব দেখে কিছু একটা বুঝে নিয়েই বললেন 'আমার সাথে আসুন'। ওনাকে অনুসরণ করে ক্যাম্পের উল্টোদিকে কোকলাস পয়েন্টে পৌঁছালাম। প্রায় দিন বিকেলে কোকলাস এখানে আসে। আজ আমাদের ভাগ্য অতি মন্দ। সময়াভাবে আজ বেশিক্ষন জঙ্গলটা ঠিকঠাক ছানমিন করা হলো না।
টেন্টগুলি আধুনিক হলেও নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে টেন্টে কোনো প্লাগপয়েন্ট নেই। চার্জ করবার জন্য ডাইনিংয়ে গিয়ে চার্জ করাতে হয়। মোবাইল আর ক্যামেরার ব্যাটারি নিয়ে ডাইনিংয়ে আসতেই নারায়ণ জি কফি আর চিকেন পকোড়ার প্লেট বাড়িয়ে দিলেন। একদিন পরে কোজাগরী লক্ষীপূর্ণিমা। আলোয় ভেসে যাচ্ছে টেন্ট সংলগ্ন নরম ঘাসের লন। উল্টোদিকের জঙ্গল লাগোয়া পাইন, ওক, বার্চ, দেবদারুর পাহাড়ের ঢালজুড়ে আকাশলীন জ্যোৎস্নার চুম্বন। আসলে সিগরীর চারপাশ পুরো নিথর পাহাড়ী জঙ্গল। দূরে দু'একটা টিমটিমে আলো ছাড়া বোঝাই যায়না লোকবসতি, দোকানপাট কিংবা আধুনিক সভ্যতার কোনো বিকাশ হয়েছে বলে। রাত্রে দেশী চিকেনের ঝোল, রুটি আর স্যালাড দিয়ে ডিনার করে লেপের তলায়। পৌনে পাঁচটার সময় এলার্ম বেজে উঠতেই উঠে বসলাম। কোকলাসের ডাক ভেসে আসছে, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে পড়লাম। সাড়ে পাঁচটার সময় নারায়ণ জি চা নিয়ে রেডি। চন্দন জি কে নিয়ে কোকলাস এবং চিয়ার ফেজেন্ট এর খোঁজে চললাম। পথের দু'ধারে ভালোভাবে লক্ষ্য করতে করতে এগিয়ে চলেছি। একসময় মূল রাস্তা ছেড়ে একটু উঁচুতে উঠে পাহাড়ী রাস্তার আনাচে কানাচে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে মাপতে শুরু করলাম। চন্দন জি বলেছিলেন শীতে তুষারপাতের সময় কোকলাস এবং চিয়ার ফেজেন্ট এর জীবনযুদ্ধ চলে। খাদ্যের অভাবে পাহাড়ের পাথরের খাঁজে সাময়িক আস্তানা নেয় এই পাখিরা।ভোরবেলা পাহাড়ের যেদিক থেকে কলিং হচ্ছিল সেই অভিমুখে এসেও এখনো পর্যন্ত দেখা পাইনি। গতবৎসর প্যাঙ্গট থেকে যখন এখানে এসেছিলাম তিনবারই কোকলাসের দেখা পেয়েছিলাম।
মূল রাস্তা ছেড়ে একটু উঁচুতে পাহাড়ের বনপথে শ্যেন দৃষ্টিতে ক্যামেরা ঝুলিয়ে চলেছি, মাঝে মাঝে চন্দনজির সাথে টুকরো ফিসফাস কথা। এরই মাঝে ব্রাউন ফ্রন্টেড উডপেকার, রুসেট স্প্যারো আর রেড-বিলড ব্লু ম্যাগপাই এর ছবি নিলাম। হাঁটতে হাঁটতে বিনায়ক পয়েন্টে চলে এলাম। দুর্ধর্ষ একটা বনবিশ্রামাগার আছে এই বিনায়ক পয়েন্টে। আছে ছোট্ট একটা ফরেস্ট উপনিবেশ যাকে স্থানীয়রা বলেন ফরেস্ট কলোনি। বিনায়ক পয়েন্ট থেকে বেশ কিছু দূরে একটানা উঠে যাওয়ার পরেই আঁকাবাঁকা পাকদন্ডীর শুরু। মূল রাস্তা থেকে বেশ কিছু দূর পর্যন্ত ঢালু হতে হতে নেমে যাওয়া গভীর জঙ্গল, তার মধ্যে পাহাড়ী পথ ছাড়া লোকালয়ের চিহ্ন মাত্র নেই। কিছুক্ষণ পর সেই জঙ্গলই আবার সুদূরে সীমাহীন উচ্চতায় উঠে গেছে পাহাড়ের পাকদন্ডীপথ বেয়ে। দূরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে সেই পাহাড়ের উঁচু নিচু শৃঙ্গ।বিনায়ক কলোনি ছাড়িয়ে ২০০ মিটার এগোতেই একটা গাছে পেলাম ব্ল্যাক থ্রোটেড টিট, গ্রীন ব্যাকড টিট, ইউরেশিয়ান জে, চেস্টনাট-বেলিড নাটহ্যাচ, হিমালয়ান বুলবুল । প্রভাত দা আর বিপিন দা ফরেস্ট কলোনিতে গেল একটু চা পান করা যায় কিনা দেখতে। আমি একা একা একটু একটু করে এগোতে লাগলাম। হঠাৎ দেখি কোকলাস দ্রুতগতিতে নেমে এসে রাস্তা পার হলো। আমি এই অবস্থায় দু' তিনটে শাটার চেষ্টা করেও যুৎসই ফ্রেমবন্দি করতে পারলাম না। প্রায় সাড়ে আটটা বাজে। ফেরার পথ ধরলাম। ফিরবার সময় হোয়াইট ব্রাউড শ্রাইক ব্যাবলার, স্ক্যালি বেলিড উডপেকার এর ছবি পেলাম। আলু পরোটা ও আচার দিয়ে ব্রেকফাস্ট করে ক্যাম্পের আশেপাশে দ্বিতীয় দফার জন্য রেডি হলাম।
গলার কাছে ধবধবে সাদা অনেক লাফিংথ্রাশ হঠাৎ ক্যাম্পের চারপাশে এক গাছ থেকে আরেক গাছে কলকোলাহলের মধ্যে বিপিন দা'র তর্জনীর বদভ্যাস এই পরিমাপ বেড়ে গেলো। ক্যাম্প থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে হনুমান মন্দিরের কাছে দাঁড়ালাম, এখানে একটা বেশ বড় রিসর্ট বা ইমারত তৈরি হচ্ছে। আমি মন্দির সংলগ্ন জলের উৎসের কাছে ফর্কটেলের জন্য বসে আছি, কিন্তু ব্যাডলাক। ফিরে এসে তাঁবুর সামনে লনে বসে আছি। কালকের মত দুটো ইয়েলো ব্রেস্টেড গ্রীন ফিঞ্চ সামনের পাতা ঝরা গাছের ডালে। এবেলার মতন বার্ডিং সমাপ্ত। ছোট্ট একটা ঘুম দিয়ে দিলাম। বিকালটা পুরোটা চিয়ার ফেজেন্ট এর জন্য বরাদ্দ রেখেছি, যদিও চন্দন জির মতে চিয়ার ফেজেন্ট দেখার সবচেয়ে ভালো সময় সকাল ৭টা-৮টা। একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। লাঞ্চের ডাক পড়তেই ডাইনিং। যাবার জন্য বের হতেই একটা স্পট উইংগড টিট একদম হাতের সামনে। ক্যামেরা আনতে আনতে ফুরুত। যে ক্যাম্পে ছিলাম, রাতটুকু বাদ দিয়ে সবসময় সঙ্গে না থাকলে হা হুতাশ আর আফশোষের সীমাহীন আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা মুশকিল। খাওয়া শেষ করে দোনো মোনো অবস্থা, চারিদিকে মেঘ এবং কুয়াশা এসে ঘিরে ধরেছে।
পাখির ছবি কতটা তুলতে পারবো এই নিয়ে অনিশ্চয়তা। বেরিয়ে পড়লাম, চন্দন জি অফিসের কাজে নৈনিতালে গেছেন। তিনজনে কিছুদূর এগিয়েছি, গাড়ীর শব্দ শুনে দেখি চন্দন জি, নিজে স্টিয়ারিং হাতে। আমরা উঠে বসতেই চিয়ার ফেজেন্ট পয়েন্টের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলাম। স্টিয়ারিং এর বাঁ পাশে বসে রয়েছেন ধর্মেন্দ্র জি। আমাদের ক্যাম্পে ঢোকার রাস্তায় ধর্মেন্দ্র জির বাড়ি কাম হোমস্টে, দুটো গাড়িও আছে। সিগরীর ক্যাম্পের পক্ষীপ্রেমিকদের গাড়ি করে কোকলাস ফেজেন্ট এবং চিয়ার ফেজেন্ট দেখানোর প্রচুর অভিজ্ঞতা। কখনো চন্দন জি, কখনো বা ধর্মেন্দ্র জি স্টিয়ারিং এ। ঘন কুয়াশা ও মেঘের মধ্যে দিয়ে গাড়ির গতি কম, মাঝে মাঝে গাড়ি দাঁড় করিয়ে সম্ভাব্য পয়েন্ট গুলোর আশে পাশে প্রায় এক কি.মি র মতন হেঁটে পাঁচজন মিলেই খোঁজ করছি। বিপিন দা ও চন্দন জি একটু আগে, আমি মেজদা মোটামুটি ৫০০ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে, আর ধর্মেন্দ্র জি দূরে। চিয়ার ফেজেন্ট পয়েন্টের ঠিক দেড় কি.মি আগে গাছের গুঁড়ি গুলোকে পাশ কাটিয়ে পেছনে ঘুরতে যাবো, এই সময় দেখি গাছের আড়ালে চিয়ার ফেজেন্ট (F) চকিতে শরীরটাকে ঘুরিয়ে বাঁ দিকে পা ফেলতে যাব, পা স্লিপ করে গেল। এমনভাবে ডান পা পাথরে লাগলো সেইসময়, ঈশ্বরকে ডাকা ছাড়া উপায় নেই। পুরো খাদের ধারে। সঙ্গীরা তাড়াতাড়ি এসে উদ্ধার করলো। উঠে দেখলাম পাহাড়ী অধিবাসীদের কেটে যাওয়া ঘাস ওখানে জমিয়ে রাখা হয়েছিল। কোনোরকমে গাড়িতে উঠে ক্যাম্পে। হাঁটু ফুলে গেছে, দু'এক জায়গায় কেটে ছড়ে গেছে। পেইনকিলার, এন্টিসেপটিক, নারায়ণ জির জোগাড় করে দেওয়া বরফ, সব দিয়ে প্রাথমিক ব্যাপারটা সামাল দিলাম।
সারারাত ভালো ঘুম দিয়েছি। মেজদার ডাকে ঘুম ভাঙল, বললাম,আমি আজ যেতে পারবোনা, তোমরা যাও। ধর্মেন্দ্র জি এবং চন্দন জি কে বললাম পায়ের যা অবস্থা বেরোতে পারবো না। আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। সাতটা নাগাদ তাঁবুর বাইরে বেরিয়ে এলাম। তাঁবুর সামনে নাতিবিস্তৃত নরম ঘাসের ভিতর পা ডুবিয়ে চেয়ারে বসলাম। শরতের মাঝামাঝি এখন। বাতাসে হিমেল পরশ। আজ আকাশ পরিষ্কার, মেঘহীন ঘন নীল আকাশ জুড়ে মিঠে আলোর উষ্ণতা। নরম ঘাসে এক পা আর চেয়ারে এক পা তুলে চারিদিকে পাখিদের কলরব শুনছি। লন সংলগ্ন রেলিং এবিং লাগোয়া গাছগুলিতে স্ট্রীকড থ্রোটেড লাফিংথ্রাশ, হুইসকার্ড ইউহিনা, গ্রে হুডেড ওয়ারবলার, ব্লাইথস লিফ ওয়ারবলার, গ্রে বুশচ্যাট, ভারটিডার ফ্লাইক্যাচার, ওয়ালক্রিপার, রুসেট স্প্যারো, স্লেটি হেডেড প্যারাকিট এর সমাগম। সত্যিই ক্যাম্প জুড়ে এত অজস্র পাখি যে বাইরে যাবার দরকার পড়ে না। মাঝ সকালের রোদ্দুর ঠিকরে পড়ছে ঘন সবুজ পাতা থেকে। নারায়ণ জি ফ্লাস্কে করে কফি ও আধখোলা বিস্কিটের প্যাকেট রেখে গেলেন। এই গ্রামের মানুষ নারায়ণ জি। গোটা সিগরী গ্রাম জুড়ে ৩০-৩৫টি পরিবারের বাস। অনুরোধ করলাম তাঁবুর ভিতর থেকে ক্যামেরা টা একটু এনে দিতে। তাঁবু থেকে একটু দূরেই দেখতে পাচ্ছি একটা গাছে তিনটে হিমালয়ান বারবেট, ইয়েলো-বিলড ব্লু ম্যাগপাই আর ব্ল্যাক টিট । দুর্ধর্ষ ছবি হয়তো হতো, কিন্তু বিধি বাম। শিশির ভেজা ঘাসে কাপড়ের ক্যাম্বিস জুতো ভিজে গেল। বিপিন দা ও মেজদা ফিরে এলেই চলে যাবো এখন থেকে। বেশ মনখারাপ আর অব্যক্ত যন্ত্রনা নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম। আসার আগে ক্যাম্পের দিকে এক ঝলক তাকাতেই শুনতে পেলাম হিমালয়ান বারবেট এর শ্রুতিমধুর ধ্বনি।
কেন সিগরী : সিগরী ক্যাম্প হলো K.M.V.N পরিচালিত আধুনিক ব্যবস্থাযুক্ত টেন্টেড ক্যাম্প। টয়লেট এটাচড ও ইউরোপীয়ান ফেসিলিটি থাকলেও গরমজল বালতি করে সাপ্লাই দেওয়া হয়। প্যাঙ্গট থেকে ৫ কি.মি ও কাঠগোদাম থেকে ৫৫ কি.মি দূরে এর অবস্থান। প্যাঙ্গট এর থেকে অনেক কম খরচে নিরামিষ খাবার সহ জনপ্রতি ১০৫০ টাকায় থাকা যায়। গোটা ক্যাম্প জুড়ে অজস্র বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখা যায়।
ক্যাম্পের সময় : নভেম্বরের শেষ থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তুষারপাতের কারণে ক্যাম্প বন্ধ থাকে। ভালো করে খোঁজ করে ক্যাম্প বুকিং করবেন। এপ্রিল থেকে জুন পিক সিজন।
খাওয়া দাওয়া : নিরামিষ খাবার সাথে ডিম পাওয়া যায়। চিকেন বা মাটন খেতে চাইলে আলাদা দাম দিতে হবে।
* নৈনিতাল থেকে আলাদা জলের বোতল কিনে নেওয়া ভালো
* নৈনিতাল/ কাঠগোদাম/লালকুঁয়া থেকে গাড়ির জন্য
চন্দন জি - 9410120865
টর্চ, মিনারেল ওয়াটার, ঠান্ডার পোষাক, মেডিসিন সঙ্গে রাখবেন।
কাঠগোদাম থেকেও নৈনিতাল যাবার পথে নয়নাগাঁও এর কাছে পন্ডিতজির মাটন রাইস। ফুলপ্লেট ৩০০ টাকা, হাফপ্লেট ১৫০ টাকা। খুব পেটুক না হলে ফুলপ্লেটের দরকার নেই।
Comments