Tiger and Wildlife Protection Act
***
এশীয় কৃষ্টি ও সংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ হলেও আমাদের এই উপমহাদেশে বাঘের ইতিহাস খুব আশাপ্রদ নয়। চীন ভারত জাপান থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশেই নানা দেবদেবীর উপ্যাখান ও সংস্কৃতির অঙ্গ হল বাঘ।
ভারত, বাংলাদেশ, মালেশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় পশু হল বাঘ। বিজ্ঞানী লিনেশাস 1758 সালে Tiger সায়েন্টিফিক নাম FELIP TIGRISAS রাখলেও 1929 সালে বিজ্ঞানী রোগিনাল্ড পোকক এর নাম করেন Panthera Tigris.
বাঘের গর্জন দু মাইল দূর থেকে ও শোনা যায়।
Tiger Photo Gallery
Tiger Video Gallery
পৃথিবীতে বাঘের একটি প্রজাতি ও নয়টি উপপ্রজাতি। তারা হল
1) - সাইবেরিয়ান বা আমূর টাইগার (বিপন্ন একমাত্র চিড়িয়াখানায় ব্রিডিং করে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে।
2) - ইন্ডিয়ান বা বেঙ্গল টাইগার ( ভারত বাংলাদেশ নেপাল ভূটান )
3) সাউথ চায়না টাইগার ( critically endangered প্রায় বিলুপ্ত )
4) মালায়ান টাইগার ( থাইল্যান্ড ও মালেশিয়া )
5) ইন্ডো চাইনীজ টাইগার ( কাম্বোডিয়া , লাওস , বার্মা , ভিয়েতনাম ) করবেট টাইগার নামে ও ডাকা হয়।
6) সুমাত্রাণ টাইগার
আর যে তিনটি প্রজাতি একবারে বিলুপ্ত হয়ে গেছে তারা হল -----
7 ) বালি টাইগার 1940 সালে
8) কাসপীয়ান টাইগার 1970 সালে
9) জাভান টাইগার 1980 সালে
তবে ওপরের ছয়টার মধ্য একমাত্র বেঙ্গল টাইগার ছাড়া বাকী গুলোর ভবিষ্যৎ যে খুব উজ্জ্বল তা নয়। এই নয়টি প্রজাতির মধ্যে সাইবেরিয়ান টাইগার সবচেয়ে বড়। এক সময় আমুর অববাহিকা থেকে দক্ষিণের বরফ মোড়া অঞ্চল বা সব ধরণের জঙ্গলে বিরাজ করা বাঘের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার পেছনে নানা কারণ চিহ্নিত করা যায় : এর অন্যতম ও প্রধান কারণ ট্রফি হান্টিং এর নামে নির্বিচারে শিকার । 1972 সালে Wildlife protection act তৈরি হবার আগে পর্যন্ত ভারতবর্ষে প্রায় লক্ষাধিক বাঘ শিকার করা হয় । ঔপনিবেশিক আমল থেকে ব্রিটিশ লাটসাহেব ও রাজা মহারাজদের ট্রফি হান্টিং নামক শিকার মোচ্ছবে সামিল হওয়া, মানুষ ও বন্যপ্রাণী সংঘাত, বাসস্থান সংকোচন , এলাকা দখলের লড়াই ও অন্যতম কারণ। ভারতের বাইরে বাঘ বিলুপ্ত হবার পেছনে মূল কারণ চোরাচালান ও ঔষধ তৈরির জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের প্রচুর দাম। বন্যপ্রাণ চোরাচালান নিয়ে কাজ করা TRAFFIC এর হিসাব অনুযায়ী 2015 সালে অবৈধ বাঘ শিকারের ঘটনা 26, 2016 তে 50, এবং 2017 তে প্রায় 40 টি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী পর্যায়ে পশ্চিমী উপনিবেশের পতনের পর পর স্বাধীন রাষ্ট্র গুলো ধীরে ধীরে নিজেদের বন ও পরিবেশ নীতি তৈরিতে আগ্রহী হয়। 1972 সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে তৈরি হয় "বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইন 1972" বা "Wild life protection Act 1972" ( WPA 1972) আজ ভারতবর্ষে যতটুকু বন্যপ্রাণের অস্তিত্ব লক্ষ্য করি তার পুরো কৃতিত্বও শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর। 1972 সালে WPA চালু হবার পর 1973 সালে বাঘ কে জাতীয় পশু মান্য করা হয় ও প্রজেক্ট টাইগার এর সূচনা হয়। WPA প্রণয়ন হবার পর যথেচ্ছ বাঘ শিকার বন্ধ হলেও এবং প্রাথমিক ভাবে কিছু সাফল্য এলেও এই সাফল্য বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। 1990 এর পরবর্তী সময় গণনায় দেখা যায় বিশ্বজুড়ে বাঘের সংখ্যা দ্রুত হারে কমছে বিশেষ করে 1990 এর পরর্বতী সময়ে কমতে কমতে 2006 এ বাঘের সংখ্যাটা দাঁড়ায় 1411 এবং 2010 NTCA চালু হবার পর 1706। তবে 2017- 2018 te সংখ্যাটা বেশ আশা ব্যঞ্জক প্রায় 4000 এর ওপর।
এখন আপনাদের মধ্যে প্রশ্ন হতে উঠতে পারে Wildlife protection act থাকা স্বত্তেও বাঘ এর সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পেল কি করে?
এর অনেক কারণ এর মধ্য অন্যতম কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে বন্যপ্রাণীর বেআইনি ব্যাবসা ,যথেচ্ছ চোরা শিকার এবং বাঘের প্রাকৃতিক বাসস্থানের দ্রুত সংকোচন। আসলে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী বন্যপ্রাণীদের সংরক্ষণের কথা বলা থাকলেও চোরাশিকারিদের অপরাধের শাস্তির বিধান ছিল নগণ্য। এখন অনেক কড়া আইন হয়েছে । সত্তরের দশকের শেষ থেকেই IUCN ( International union for conservation of nature) প্রতিটি দেশ কেই সতর্কবার্তা দিতে থাকে যে এখনই কড়া পদক্ষেপ না নিলে পৃথিবী থেকে বাঘ পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এর মধ্যে 2004 সালে সরিস্কা থেকে ও 2009 সালে পান্না থেকে বাঘ পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। আমি আগের পর্বে উল্লেখ করেছিলাম বাঘ সংরক্ষণ এর ক্ষেত্রে সরিস্কার অবদানের কথা। সরিস্কা থেকে বাঘ নিশ্চিহ্ন হতেই গোটা বিশ্বজুড়ে আলোড়ণ পরে যায়। 2001 সালে যখন আমি Chartered accountant পরবার জন্য মনস্থির করি সেই বছর খুব সম্ভবত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ভারতে আসেন। তার সংক্ষিপ্ত সফরে একটি ভাষণে তিনি তাজমহলের দূষণ আর বিশ্বজুড়ে বাঘের নিশ্চিহ্ন হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। আমার মনে ওই ভাষণটা খুব দাগ কেটেছিল। 2004 এ সরিস্কা থেকে বাঘ নিশ্চিহ্ন হবার পর গোটা বিশ্বজুড়ে আলোড়ণ পরে যায়। IUCN এবং ভারতীয় বন্যপ্রাণ বোর্ড Tiger Task Force এর সুপারিশ অনুযায়ী Project Tiger কে ভেঙে দিয়ে NTCA বা National Tiger conservation Authority গঠিত হয়। NTCA এর মূল কাজ হল দেশে টাইগার রির্জাভের সংখ্যা বাড়িয়ে বাঘ ও তার প্রাকৃতিক বাসস্থান কে আর ও বেশী সংরক্ষিত করার প্রচেষ্টা শুরু হয়। এই সব স্বত্বেও 2009 পান্নার জঙ্গল থেকে বাঘ পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ভারতবর্ষে যত টাইগার রির্জাভ বা জাতীয় উদ্যান আছে ( যেখানে বাঘের আবাস আছে) সবাই কে NTCA গাইড লাইন মেনে চলতে হয়। জঙ্গলে কতটা অংশ টূরিজমের জন্য খোলা থাকবে , বর্ষায় জঙ্গল খোলা থাকবে কিনা ? কতগুলো জিপসী জঙলে প্রবেশ করবে সব NTCA এর গাইড লাইন মেনে তৈরি হয়। এখানে প্রশ্ন কোনো জঙ্গল বা পৃথিবী থেকে যে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী বা পাখী বিলুপ্ত বা বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে সেটা কিভাবে জানা যায় ? এই ব্যাপারে IUCN হল শেষ কথা । ফুটবলে যেমন FIFA , ক্রিকেটে যেমন ICC, ঠিক তেমনি বন্যপ্রাণীদের ক্ষেত্রে IUCN.যেসব প্রাণী বিলুপ্ত বা বিপন্ন হতে পারে বহু আগে থেকে IUCN তার তালিকা তৈরি করে তাদের সংরক্ষণ এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিতে অনুরোধ ও গাইডলাইন ঠিক করে দেয়। বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণ ও তাদের বাসস্থান ও পৃথিবী জুড়ে সেই প্রাণীটা সংখ্যায় কতগূলো বেঁচে আছে তার ওপর নির্ভর করে IUCN এই Category ঠিক করে । এই category গুলোর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয় IUCN RED LIST। এই ক্যাটাগরি গুলোকে iucn চার ভাগে ভাগ করে যথা
1) Extinct ( এই Extinct এর মধ্য আবার দুটো ভাগ যথা -
a) Extinct (EX)
b) Extinct in the wild
******************
2) THREATENED ( এই threatened এর মধ্যে আবার তিনটে ভাগ যথা
a) - Critically Endangered (CR)
b) Endangered (EN)
c) Vulnerable (VU)
********************
3) LOWER RISK - ( এই Lower Risk category আবার তিনটে ভাগ যথা -
a) Near Threatened ( NT) -
b) Conservation Dependent (CD)
c) Least concern ( LC)
***************
4) 0ther categories ( এই আদার categories আবার দুটো ভাগ যথা
a) Data Deficient (DD)
b) Not Evaluated (NE)
**********************
কোনো birds ba wildlife বিশেষ করে Birds এর বই গুলোতে কোনো পাখীর নামের পাশে Lc, vu ba En এগুলো লেখা থাকে এর মানে Iucn অনুযায়ী এর বর্তমান status .
এইবার প্রশ্ন Iucn চাইলেই কি যে কোনো প্রাণীর গায়ে বিপন্ন বা বিলুপ্ত তকমা দিতে পারে। ?
এর উত্তর হলো - Iucn এর হয়ে এই কাজটা করবার জন্য IUCN এর তৈরি করা অনেকগুলো উচ্চমানের কমিটি বা সংগঠন রয়েছে রয়েছে - যেমন বন্যপ্রাণ হলে - Species Survival committee সংক্ষেপে SSC ( প্রতি পাঁচ বা দশ বছর অন্তর species review করা) , পাখী বা Birds এর ক্ষেত্রে Birdlife International (Authority of red list of birds ) যদি সেটা উদ্ভিদ হয় তাহলে zoological society of london বা Botanical garden conservation আবার world conservation of monitoring এই রকম সংগঠন গুলোর রির্পোট এর ওপর ভিত্তি করে ওই Ex, CN, VU , Cr এই তকমা গুলো দেওয়া হয়। যে কোনো প্রকৃতিবিদ বা বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ এর কাছে এই কমিটি গুলোর মেম্বার হওয়া পুরো নোবেল প্রাইজ পাওয়ার সমান। ইন্টারনেটে বা IUCN এর website গিয়ে এই Redlist এর তালিকা পাওয়া যায়। এই তালিকা এবং অনান্য রির্পোট এর ওপর ভিত্তি করে প্রতিটি দেশ তাদের দেশের বন্যপ্রাণীদের সংরক্ষণ এর গুরত্ব ঠিক করে। যেমন আমাদের দেশে বন্যপ্রাণ আইন অর্থাৎ WPA 1972 অনুযায়ী প্রতিটি বন্যপ্রাণীর আলাদা আলাদা category বা Schedule আছে ।আরো ভালোভাবে বলতে গেলে Schedule 1- Schedule 2 - schedule 3 এইরকম।
কেউ কেউ জানতে চায় যে বন্যপ্রাণীরা কোথায় National park না Wildlife sanctuary কোনটায় বেশী prtoection পায় ?
এর উত্তর হল - জাতীয় উদ্যান বা অভয়ারণ্য যাই হোক না কেনো সব জায়গায় বন্যপ্রাণীরা সমান গুরত্ব পায়। কারণ দুটোই PA বা প্রোটেকটেড এরিয়া । তবে জাতীয় উদ্যান গুলোতে যেহেতু প্রচুর পর্যটক ও বন্যপ্রাণপ্রেমীরা যায় তাই এইসব জায়গায় আইনকানুন প্রোটেকশন অনেক ভালো। তবে এক্ষেত্রে দেখতে হবে যে কেউ যে জঙ্গলে যাবেন সেই জঙ্গলে কি ধরণের বন্যপ্রাণ হ্যাবিটেট আছে । যদি সেই জঙ্গলে schedule 1 পর্যায়ে পরে এমন বন্যপ্রাণীর হ্যাবিটেট থাকলে তার আইন কানুন বেশ কড়া ।আমি কানহা বান্ধবগড় এগুলো ছেড়ে দিলাম, মনে করা যাক ভ্রমণকারী জয়সলমির এ Desert National Park গেছেন যেখানে বিপন্ন প্রজাতির GIB ( Great Indian Bustard) বা Red headed vulture এর আবাসস্হল এগুলো খুব high protected area .. কারণ বর্তমানে সারা পৃথিবী জুড়ে এই দুটো প্রজাতির পাখীর সংখ্যা এক হাজারের কম। আবার যদি সিঙ্গলীলা জাতীয় উদ্যান যেটা রেড পান্ডার জন্য বিখ্যাত তার ও সমান গুরত্ব কারণ এরা schedule 1 এবং প্রায় বিলুপ্ত। ইন্টারনেটে WPA act 1972 অনুযায়ী এই schedule 1 animal দের তালিকা পাবি। সিঙ্গলীলা জাতীয় উদ্যানে একবার দুজন বিদেশী ঢুকে পড়ে কিছু গাছের পাতা আর প্রজাপতি সংগ্রহ করছিল , বনদফতর পূরো জেলে ঢুকিয়ে দেয়। এত আইন কানুন থাকা স্বত্তেও বাঘ , লের্পাড , গন্ডার নিয়মিত চোরাশিকারিদের লালসার শিকার । আসলে কি অরণ্য রক্ষা করবার জন্য যতজন বনকর্মী দরকার তার চারভাগের একভাগ ও নেই। বিভিন্ন জঙ্গলে ঘোরার সুবাদে দেখেছি ভারতবর্ষের অর্ধেক ফরেস্ট অফিসার নিজেদের জঙ্গল টা ভালো করে চেনে না বলতে গেলে জঙ্গল সম্পর্কে ধারণা নেই । আর যে কজন ডেডিকেটেড বনকর্মী আছেন তারা সংখ্যায় এতই কম যে তাদের পক্ষে সব কিছু করা সম্ভব হয়ে ওঠে না । বনদফতরে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করবার অফিসারের সংখ্যা নগণ্য।
প্রশ্ন - 1) বাঘের গায়ে কটি রঙ থাকে ।
2) বাঘ জাতীয় পশু হবার আগে ভারতের জাতীয় পশু কি ছিল ?
Comments